সরেজমিনে সফিয়ারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবন্ধী সফিয়ারের স্ত্রী সন্তান বাড়িতে নেই। তারা জীবিকা নির্বাহের তাগিদে বুড়িমারী স্থলবন্দরে পাথর ভাঙার কাজ করতে গেছেন বলে জানান বাড়িতে থাকা সফিয়ারের বৃদ্ধ মা সুফিয়া বেগম। সুফিয়া বেগমের কাছে তার ছেলে সফিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি হাউমাউ করে কান্না শুরু করেন। পরে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, বাবা আমি কিছু বলতে পারবো না। আমি যদি ও্ই সুদ ব্যবসায়ী পরিবারের বিরুদ্ধে কিছু বলি তাহলে তারা আমার ছেলেকে নাকি জেলে দেবে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশও তাদের কথায় ওঠে বসে। তাই আমি কাউকে কিছু বলতে চাইনা। দরকার হলে আমাদের একমাত্র এই বসত ভিটা বিক্রি করে টাকা দেবো। পারলে আপনারা আমার ছেলেকে জেল থেকে বের করে আনেন। কয়েকদিন আগে আমি তাকে দেখতে গিয়েছিলাম, এ সময় আমার ছেলে সফিয়ার কান্না করতে করতে বলেন মা এটি থাকলে মুই মরি যাইম, যেমন করি হোক মোক এটি থাকি বের করি নিয়া যাও বলে আমার মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কাঁদতে থাকেন সুফিয়া বেগম সফিয়ারের ভাই অলিয়ার বলেন, আমার ভাই তোতার কাছে ৫০ হাজার টাকা নিয়া ভাতিজির বিয়ে দেয়। সেই টাকার সুদ ও আসল টাকা প্রায় সব দেয়া হয়েছে, অল্প কিছু টাকা বাকি আছে। সেটাও আমরা দিতে চাইছি। কিন্ত টাকাটা দিতে দেরি করায় তোতা তার ভাই মানিককে দিয়ে আদালতে মামলা করায়। আর সেই মামলায় আমার ভাই জেলে। তাদের পুরো পরিবার সুদ ব্যবসার সাথে জড়িত। তাদের কারণে এলাকার অনেক মানুষ বাড়ি ছাড়া।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু বক্কর বলেন, আমরা তোতাকে অনেক অনুরোধ করছি সফিয়ারের নামে যেন মামলা না করে। যে কয়টা টাকা পাবে তার জন্য কিছুদিন সময় চাওয়া হয়েছিলো। কিন্ত তারা সে কথা এড়িয়ে যায়। অতঃপর তারা মামলা করে। আর সেই মামলায় সফিয়ার জেলে। মুদি দোকানদার আনিছুর বলেন, তালেব, তোতা, মানিক চিহ্নিত সুদ ব্যবসায়ী। আমি তাদের কাছে সুদের ওপর টাকা নিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। সুদের টাকা দিতে একটু দেরি হলে তারা আমার দোকানে এসে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী জোড় করে নিয়ে যান। আমি চাই তাদের বিচার হোক। তাদের কারণে ফল ব্যবসায়ী হাসিনুর, ডিলার ব্যবসায়ী হাসু, কোম্পানিতে চাকুরি করা মোনাম এখনো বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আছেন। আর এই সুদ ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করেন মোতাহার নামের এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী।রিক্সা চালক আমিনুর বলেন, সুদের টাকা দিতে না পারায় তালেব আমার আয়ের একমাত্র উৎস রিকশা নিয়ে যায়। পরে অনেক কষ্ট করে টাকা দিয়ে রিক্সা ফেরত আনি।এ বিষয়ে দাদন ব্যবসায়ী তোতা মিয়া বলেন, আমি সফিয়ারকে আমার ছোট ভাই মানিকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দিছি। দাদন ব্যবসায়ী মানিক মিয়া বলেন, সবাই সুদের ব্যবসা করে। তাহলে আমরা করলে দোষের কি। টাকা দিতে পারে নাই তাই মামলা করেছি অপর ব্যবসায়ী আবু তালেব বলেন, আমি সুদের ব্যবসা করিনা। মানুষ এমনি এমনি আমার নামে মিথ্যা কথা ছড়াচ্ছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বলেন, সফিয়ার একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। আমি তার মায়ের সাথে কথা বলেছি। সফিয়ারকে ছাড়িয়ে আনার জন্য যা যা করনীয় আমরা করবো।