এস বাবু রায়, লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি:
শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড । আর প্রাথমিক শিক্ষাকে এই শিক্ষার মূলভিত্তি বিবেচনা করা হয়। আধুনিক বিশ্বেও সবদেশেই প্রাথমিক শিক্ষার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয় । আমাদের দেশেও এর ব্যতিক্রম নয় । তবে আমাদের দেশে সবার জন্য মান সম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে ঝরে পড়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ঝরে পড়া কী ? প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী শিশুরা প্রাক প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ছয় বছর মেয়াদি প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা শেষ হওয়ার পূর্বে যে কোন সময় যে কোন শ্রেণি থেকে বিদ্যালয় ত্যাগ করে লেখাপড়া ছেড়ে দিলে তাকে প্রাথমিক স্তরের ঝরে পড়া বলে। ঝরে পড়ার কারণপ্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারনগুলোর মধ্যে অভিভাবকদের অসচেতনতা, দারিদ্রতা, শিশু যত্নের ঘাটতি, মেয়ে শিশুকে শিক্ষা না দেয়ার প্রবনতা, বাল্য বিবাহ, শিশুশ্রম অসুস্থতা, ভাষার সমস্যা, বিদ্যালয় ও শ্রেণিকক্ষ আকর্ষনীয় নয়, দূর্বল শিক্ষক ও শিক্ষাব্যবস্থা, বিদ্যালয়ের সময়সূচী, ভৌত সুবিধাদি, সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম, বিদ্যালয়ের দূরত্ব, যাতায়াত ব্যবস্থা, নিস্ক্রিয় এসএমসি, শিক্ষক অভিভাবক সম্পর্ক, বিদ্যালয় পরিদর্শন ব্যবস্থা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।ঝরে পড়ার এই কারন গুলো রোধ করে শতভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিতিতে শিক্ষকগণ নিম্নলিখিত ভূমিকা পালন করে যাচেছন। বিদ্যালয়ের কর্মকান্ডে স্থানীয় জনগনকে সম্পৃক্ত করা শিশু জরিপ, শতভাগ ভর্তি, হোমভিজিট, শিক্ষক শিক্ষার্থীর নিয়মিত উপস্থিতি, বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৃক্ষরোপন, বিদ্যালয়ের সম্পদ রক্ষনাবেক্ষন, বিষয় পারদর্শী শিক্ষক নিয়োগ, স্থানীয়ভাবে উপকরন সংগ্রহ ও তার ব্যবহার নিশ্চিত করা, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালন করা, উঠান বৈঠক মা সমাবেশ ও অভিভাবক সমাবেশ স্লিপষ্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে সভার আয়োজন করা ইত্যাদি কার্যক্রমগুলো শিক্ষকগণ নিয়মিত ভাবে পরিচালনা করায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে।সমাজ সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গের ভূমিকায় শিক্ষকের সম্পৃক্ততা ঃ ঝরে পড়া রোধে সমাজ সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা হচেছ বিভিন্ন সভা সমাবেশের মাধ্যমে অভিভাবকদের সচেতন করা, শিশুদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিতকরা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ করা, দরিদ্র শিশুদের জন্য শিক্ষা উপকরন স্কুলড্রেস ইত্যাদির ব্যবস্থা করা, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনের সুযোগ বৃদ্ধি করা, বিদ্যালয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা নিরাপদ রাখা, গরীব -মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা এসব কার্যক্রমে শিক্ষকগণ সমাজ সম্পৃক্ত ব্যক্তি-বর্গের সাথে অংশগ্রহণ ও সংযোগ স্থাপন করছে। বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীন ব্যবস্থাপনার সঠিক পরিচালনা ঃ শিক্ষার্থীর সঠিক উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা, যথাযথ শেণিকার্যক্রম পরিচালনা, পাঠোপযোগী উপকরনের ব্যবহার, মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠদান, মিড ডে মিলের ব্যবস্থা, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা, মেয়ে শিশুদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা করা, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষ যত্ন নেয়া, সততা স্টোরের মাধ্যমে নৈতিকতা শেখানো বিনোদনের জন্য কাবিং কার্যক্রম ও বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার সরঞ্জামের ব্যবস্থা রাখা, বিদ্যালয়ের জন্য সম্পদ সংগ্রহ ও তা রক্ষনাবেক্ষনের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালিত হচেছ যা শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে সহায়ক। শিক্ষকের ব্যক্তিগত আচরন ঃ প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা শিশু। তাই তারা খুবই অনুকরন প্রিয়। প্রিয় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আনতে আজ শিক্ষকবৃন্দ ও ইউনিফর্ম পরিধান করছে। সুন্দরভাবে কথা বলা, মার্জিত চালচলন, শিশুদের সাথে খারাপ ব্যবহার না করা, আনন্দঘন পরিবেশে নিরাপদ শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করা ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষকগণ অবদান রাখছে । সবশেষে বলা যায় ,ঝরে পড়া রোধ করে শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে শিক্ষকগণের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের বিপুল শিক্ষার্থীকে জন সম্পদে পরিণত করতে তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষকরা তাই আমাদের গর্ব ও অহংকার।