ঢাকা অফিসঃ
রাঙ্গামাটির সাংবাদিক ফজলে এলাহী গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা করা সাবেক এমপি ফিরোজা বেগম চিনু বিতর্কের মুখে পড়েছেন।
ফজলে এলাহী জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠ ও বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের স্থানীয় দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক।
রাঙ্গামাটিভিত্তিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডটকম’-এ ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর ফজলে এলাহীর করা একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
‘রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের পাইরেটস বিড়ম্বনা’ শিরোনামেরর ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি ফিরোজা বেগম চিনুর কন্যা নাজনীন আনোয়ার নিপূণ নিয়ম লঙ্ঘন করে ডিসি বাংলোর পার্ক এলাকায় ‘পাইরেটস’ নামে একটি রেস্তোরাঁ গড়ে তোলেন। জেলা প্রশাসন পরে উচ্ছেদের নোটিশ দিলে খোদ জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধেই মামলা করেন নিপূণ।
নিপূণের অনিয়মের পেছনে তার মা ফিরোজা বেগম চিনুর প্রভাব রয়েছে বলেও দাবি করা হয় প্রতিবেদনে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর রাঙ্গামাটির কোতোয়ালি থানায় ১২ ডিসেম্বর সাংবাদিক ফজলে এলাহীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন চিনুর কন্যা নিপূণ। পরদিন ১৩ ডিসেম্বর চিনুও আরেকটি অভিযোগ করেন।
পুলিশ অভিযোগ তদন্তের অনুমতি চাইলে ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর অনুমতি দেয় আদালত। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এই মামলায় সর্বশেষ চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল পরোয়ানা জারি করলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফজলে এলাহীকে গ্রেপ্তার করে রাঙ্গামাটি থানা পুলিশ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাংবাদিক গ্রেপ্তারের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে। নতুন করে বিতর্কের মুখে পড়েছেন রাঙ্গামাটির সাবেক এমপি ফিরোজা বেগম চিনু।
ফজলে এলাহী গ্রেপ্তার হওয়ার পর মঙ্গলবার রাতে ফিরোজা বেগম চিনু দৈনিক বাংলার কাছে দাবি করেন, মেয়ের নয়, তার করা মামলাতেই সাংবাদিক এলাহীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ডিসি বাংলো পার্কে আমার মেয়ে লিজ নিয়ে রেস্টুরেন্ট দেয়। তিন বছরের জন্য লিজ ছিল, বিনিয়োগ করেছিল প্রায় ২৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ডিসি পরিবর্তন হলে রেস্টুরেন্ট নিয়ে ঝামেলা তৈরি হয়। ডিসি অফিসের লোকজনের সঙ্গে রেস্টুরেন্ট কর্মচারীদের বিবাদ হয়।
‘সে সময় এলাহী নিউজ করে যে এই লিজ পেতে আমি আমার প্রভাব খাটিয়েছি। সে আপত্তিকর কথাবার্তা লিখেছে। আমি তখন কোর্টে মামলা করেছি।’
গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় মেয়ের নাম থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ের নাম কেন দিয়েছে জানি না, বাদী আমি-ই।’
গ্রেপ্তারের পরদিন বুধবার সাংবাদিক ফজলে এলাহীকে জামিন দিয়েছে আদালত। জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক ফাতেমা বেগম মুক্তা বুধবার বেলা দেড়টার দিকে তাকে জামিনের আদেশ দেন।
এর পর পরই চিনুর প্রতিক্রিয়া জানতে চায় দৈনিক বাংলা।
তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, ‘সাংবাদিক এলাহী আমার বিরুদ্ধে কিছু অসত্য কথাবার্তা লিখেছিলেন, যার জন্য আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। এ বিষয়ে আমার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।’
নিজেও একসময়ে সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন দাবি করে চিনু বলেন, ‘এরশাদ আমলে রাঙ্গামাটি থেকে প্রকাশিত পার্বত্য বাংলা ও কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত রূপসী বাংলায় আমি রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছি।
‘আমিও সাংবাদিকতা করতাম। দেশের কঠিন সময়ে এরশাদ আমলে কাজ করেছি। আমরা কখনও ব্যক্তিকে জড়িয়ে তথ্যবিহীন… ব্যক্তির যদি সত্যিকার দোষ থাকে সেটা আমরা লিখতাম। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাউকে হ্যারাজ করা তো সাংবাদিকতা না। আমরা সেই সাংবাদিকতা শিখিনি।’
সাংবাদিক ফজলে এলাহীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘উনি আমার বিরুদ্ধে নিউজ পেপারে লিখেছেন, পাহাড় টোয়েন্টিফোরে লিখেছেন, যেটা আমি আদৌ না। আমি এমপি থাকাকালীন প্রভাব খাটাইছি, এই-সেই। এমপি থাকাকালীন প্রভাব খাটিয়েছি, এই কথা আমার শত্রুও বলতে পারবে না কিংবা কারও সঙ্গে দেমাগ দেখিয়েছি, খারাপ আচরণ করেছি এমনও কেউ বলতে পারবে না।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় প্রবল সমালোচনার বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে চিনু দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আদালত আদালতের গতিতেই চলবে। তদন্ত অফিসারের রিপোর্টে কিছু পেয়েছেন, সেই অনুযায়ীই আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। জনগণ তো অনেক কথা আবেগে বলে।’